Skip to content

বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায় কি?

  • by

মূল্যস্ফীতি ইংরেজি হলো Inflation যা আমাদের পরোক্ষভাবে দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে। আমরা জানি বাজারে অবস্থা খুবই খারাপ। বাজার করতে গেলে সব জিনিসপত্র দাম অতিরিক্ত এটা মূলত মূল্যস্ফীতি কারনে হয়। আমরা জানিনা কখন আমাদের দেশের বাজারের অবস্থা স্বাভাবিক হবে। এক দিকে রাজনৈতিক কৌশল ভালো না অন্য দিকে বাজারে অবস্থা ভালো না।

দেশের স্থিতিশীলতা ঠিক করতে হলে পলিটিকাল ভাবে শক্ত হতে হবে। তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে তাহলে দেশের বাজারের অবস্থা সচল হবে।

এই ব্লগ পোস্টে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করবো বিস্তারিত জানার জন্য।

মূল্যস্ফীতি কি? (What is Inflation)

মূল্যস্ফীতি বলতে পণ্য ও সেবার দাম বৃদ্ধি এবং মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা কে বোঝায়।মূল্যস্ফীতি অর্থনীতিতে চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্যহীনতার একটি চিত্র। এটি তখন ঘটে, যখন চাহিদা বেশি থাকে জোগান কম থাকে। এর ফলে মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা কমে যায় এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়। মনে করুন , যদি গত বছর ১ কেজি চালের দাম ছিলো ৫০ টাকা এই চাল নতুন বছর আসাতে ৬০ টাকা হয় তাহলে বুঝেত হবে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে।

মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক অর্থনৈতিক ঘটনা না। এর কারণে দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়ে বেশি। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের উপর যারা দিনমজুর।

মূল্যস্ফীতি বলতে কি বুঝায়? বাজারে পণ্যের দাম কম আর বেশি হতে পারে এটা স্বভাবিক একটা বিষয়। কিছু জিনিস এর দাম বাড়তে কিছু জিনিস দাম কমবে তবে সব জিনিস এর দাম অতিরিক্ত থাকলে তাহলে মূল্যস্ফতি কারণে এগুলো হচ্ছে। মনে করুন আজকের আপেল এর দাম ১৮০ টাকা সে আপেল যদি কালকে ২১০ টাকা হয় তাহলে এটা স্বস্তির বিষয়ে নই। এক দিনের ব্যবধানে ৩০ টাকা কখনোই বৃদ্ধি পেতে পারে না।

আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক জিনস ব্যবহার করে থাকি এগুলো হঠাৎ করে বেড়ে গেলে তাহলে বুঝতে হবে সব জিনিসপত্র দাম বাড়তে বেশি সময় লাগবে না। দৈনন্দিন জীবন ব্যবহত জিনিস হলো, চাল, ডাল বিদুৎ, তেল, চিনি, গ্যাস, আটা, লবণ এগুলো দাম স্থির থাকে। এই সব পণ্যের দাম হঠাৎ করে বাড়ে না, সরকার বাড়ালে এ-সব এর দাম বাড়ে।

মূল্যস্ফীতি কারণ কি? (What are the Causes of Inflation )

মূল্যস্ফীতির অনেক কারণ থাকতে পারে।প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত টাকা চাপানো।সরকার যদি অতিরিক্ত মুদ্রা সরবরাহ করে তাহলে এটি প্রধান করাণ হতে পারে।

অতিরিক্ত মুদ্রা চাপানো:

কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিরিক্ত মুদ্রা ছাপলে , তখন বাজারে টাকার সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে চাহিদা বাড়ে তখনই পণ্যের দাম বাড়ে। মনে করুন মার্কেটে ১ কোটি টাকার পণ্য আছে, ব্যাংক যদি ১.৫ কোটি টাকা ছাপে তাহলে পণ্যের চাইতে টাকা বেশি হওয়ার কারণে জিনিস এর মূল্য বেড়ে যায়। প্রায় ৫০ লাখ টাকা অতিরিক্ত থাকার কারণে এমন ঘটে। যদি বাজারে আরও ৫০ লাখ টাকার পণ্য অতিরিক্ত থাকলে মূল্যস্ফীতি হতো না।

চাহিদা বৃদ্ধি:

যখন কোনো পণ্যের চাহিদা বেশি হয়, কিন্তু সরবরাহ কম থাকে, তখন দাম বাড়ে। এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। চাহিদা মোতাবেক জিনিস না থাকলে এমনিতেই সেটার দাম বাড়তি থাকবে। সরকারের উচিত চাহিদা মোতাবেক জিনিস বাজারে পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে দেশের বাজার স্থিতিশীল বিরাজমান হবে।

    উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি:

    উপরে উল্লেখিত কারণ হলো দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ের কারণ জিনিস এর দাম বাড়তি। অনেক সময় বাহিরে রাষ্ট্রের কারণে দেশের বাজার স্থিতিশীল থাকে না।যখন উৎপাদন ব্যয়, যেমন কাঁচামাল বা জ্বালানির দাম বেড়ে যায়, তখন উৎপাদকরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।

    তেল বাংলাদেশ উৎপাদন হয় না, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়লে বাংলাদেশের সব জিনিস এর দামও বাড়তি থাকে। তবে এটা সাময়িকীর জন্য হয়ে থাকে। রাশিয়া এবং ইউক্রেনে যুদ্ধে জন্য পুরো বিশ্ববাজার জিনিসপত্র এর দাম বেড়ে যায়।

    আন্তর্জাতিক কারণ:

      আমরা সব পণ্য উৎপদান করতে পারি না। এই সব জিনিসপত্রের কাচামাল বাহির থেকে আনতে হয়। এই সব পণ্যের দাম নির্ধারন করে সেই সব দেশের সরকার। মনে করুন করোনা আগে পেঁয়াজ এর দাম ছিলো ১৮ -২০ টাকা হুর করে সেই পেঁয়াজ এর বেড়ে যায় প্রায় ৫ গুণ। এইগুলো আন্তর্জাতিক কারণ, এগুলোতে দেশের মানুষের হাত নেই।বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি বা মুদ্রার বিনিময় হারের পরিবর্তনের ফলে আমদানি পণ্যের দাম বাড়তে পারে।

      মূল্যস্ফীতি কত প্রকার?

      মূল্যস্ফীতি সাধারণত চার ভাগে ভাগ করা যায়:

      • চাহিদাজনিত মূল্যস্ফীতি।
      • উৎপাদন ব্যয়জনিত মূল্যস্ফীতি।
      • অত্যধিক মূল্যস্ফীতি।
      • অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি।

      যখন শ্রমিকরা উচ্চ বেতনের দাবি করে এবং এর ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। শ্রমিকের ও উচ্চ বেতন নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলে সবে মিল গড়া যাবে উন্নত একটা বাংলাদেশ।

      মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায় কি ? (How to Control Inflation)

      মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ নই এটা নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক সময় প্রয়োজন। তবে সময় লাগলেও এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সরকারের কাছে বিভিন্ন কৌশল আছে যাতে দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

      মুদ্রানীতির সংশোধন: এটা করা খুবই রিস্কি তবে এমন পদক্ষেপ না নিলে নিয়ন্ত্রণ করা পসিবল হবে না। কিছুদিন সাধারণ মানুষ কষ্ট পাবে তারপর পরিস্থিতি কন্টোলে চলে আসবে।এটা করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়িয়ে বাজার থেকে অতিরিক্ত মুদ্রা সরিয়ে নেয়। এর ফলে বাজারে চাহিদা কমে যায় এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এটি একমাত্র কারণ নই আরও অনেক কারণ আছে এগুলো সংশোধন করলেই সহজে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

      মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায় কি

      এই পদ্ধতিতে সাধারণ মানুষের উপর চাপ বেশি পড়বে। তাদের জীবন ব্যবস্থা অনেক বিপর্যয় নেমে আসবে বিশেষ করে দিনমজুরের।

      আরও পড়তে পারেন:

      মাসিক আয় বলতে কি বুঝায়: কিভাবে পরিচালনা করবেন

      রেমিট্যান্স মানে কি? প্রবাসী আয়ের অর্থনীতি

      বাংলাদেশ সরকারের আয়ের প্রধান উৎস কি

      ক্ষুদ্র ব্যবসার তালিকা: বাংলাদেশে শুরু করার সেরা ব্যবসার আইডিয়া

      বাৎসরিক আয় বলতে কী বোঝায়?বার্ষিক আয় কেন প্রয়োজন?

      সরবরাহ ব্যবস্থাপনা বাড়ানো: যে সব জিনিসপত্র চাহিদা বেশি সরকার উৎপাদন বাড়িয়ে বাজারে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারে। এটার মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষ মধ্যে কিছুটা স্বস্তি আসবে।খাদ্যপণ্যের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষকদের সহায়তা করা প্রয়োজন বাংলাদেশ সরকারের।

      রাজস্ব নীতির কঠোরতা: সরকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ করে। এটি সরাসরি মুদ্রার সরবরাহ কমাতে সাহায্য করে। অনেক জিনিস আছে যা অপ্রয়োজন তা কঠোরতাভাবে দমন করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত দেশের অর্থনীতি সচল হবে না ততদিন সব আমলাদের বার্তি সুবিধা দেওয়া যাবে না। শুধু এগুলো না সব সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি এই নীতি গ্রহণ করলে স্বচলতা ফিরে আসা সম্ভব।

      আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ : যেসব পণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়, সেগুলি আমদানির মাধ্যমে সরবরাহ বাড়ানো যেতে পারে। এটি চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। প্রয়োজন হলে IMF থেকে লোন নিয়ে হলেও দেশের অর্থনীতি চাকা সচল রাখা প্রয়োজন। যে সব পণ্য দরকারী সেগুলো আমদানি করা প্রয়োজন, বিলাসবহুল পণ্য আমদানি করা প্রয়োজন নাই।

      মূল্যস্ফীতি কমলে কি ঘটে? মূল্যস্ফীতি কমলে অর্থনীতিতে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। পণ্যের দাম কমে গেলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে যায়। মানুষ আগের চাইতে ভালো জিনিস ক্রয় করতে পারে।জীবনযাত্রার ব্যয় কমে আগে চাই ভোগান্ত কমনহয়। পরিবার চাহিদা পূর্ণ করা সম্ভব হয়।পণ্যের দাম কমলে মানুষ কম খরচে তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারে।

      অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হয় দেশের বাজারে।সরকার এবং জনগণ এর মধ্যে একটা আস্তাবল তৈরি হয়।
      মূল্যস্ফীতি কমলে বিনিয়োগ এবং সঞ্চয় বাড়ে, যা অর্থনীতি পরিবর্তন রাখতে সাহায্য করে।

      সর্বশেষ,

      মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূচক। এটি একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যকে চিহ্নিত করে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর নীতি গ্রহণ করা না হলে এটি মানুষের জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দেয় এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে।

      আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না এবং এই পোস্টটি শেয়ার করুন যদি এটি উপকারী মনে হয়।আমাদের টেলিগ্রাম জয়েন করতে ভুলবেন না।

      Leave a Reply

      Your email address will not be published. Required fields are marked *