যে কারণে বড় ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ছাড়া চিন্তাই করেন না
আজকের বিশ্ব একে অপরের উপরে নির্ভরশীল। আপনি আমি যেই মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করতেছি সেটাতে চীনের তৈরি কোন না কোন কিছু পার্টস আছে। আমরা যে খাবার টা গ্রহণ করি সেগুলো ও কোন না কোন দেশ থেকে আমাদের দেশে আসে।
এই যে এক দেশ থেকে আরেক দেশে পণ্য সেবা কেনাবেচা হচ্ছে এটাই মূলত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। সবাই একের উপরের সাথে সম্পর্ক, কেউ একাকী চলতে পারে না এটা সম্ভব না। আরব কান্ট্রি তাদের প্রদান রপ্তানি কারক পণ্য হলো তেল, এই তেল সারা বিশ্বের মানুষ ব্যবহার করে থাকে। কোন দেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ছাড়া চলতে পারবে না।
এই ব্লগ পোস্টে আমরা সহজ ভাষায় জানবো:
- আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কাকে বলে
- এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব
- সুবিধা ও অসুবিধা
- এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কাকে বলে? আন্তর্জাতিক বাণিজ্য হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে এক দেশ অন্য দেশের সঙ্গে পণ্য যেমন: চাল, কাপড় ও সেবা সফটওয়্যার, পরামর্শ বিনিময় করে। এর মাধ্যমে দেশগুলো একে অপরের থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি করে এবং নিজেদের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করে।
“আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলতে বোঝায় দুই বা ততোধিক দেশের মধ্যে পণ্য ও সেবা বিনিময়ের প্রক্রিয়া।”
বাংলাদেশ চা উৎপাদন করে এবং বিদেশে রপ্তানি করে থাকে ফলে চা রপ্তানি জন্য যে ডলার আয় সেটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি রূপ।
বাংলাদেশ সৌদি আরব থেকে তেল আমদানি করে, কারণ নিজের দেশে পর্যাপ্ত তেল নেই চা রপ্তানি করে যে ডলার আয় হয়েছে সেটি সৌদি আরবে থেকে তেল আনতে ব্যায় করতে হলো এগুলো হলো আন্তর্জাতিক আমদানি কিছু বৈশিষ্ট্য।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?
আমরা প্রতিদিন দৈনন্দিন জীবন ব্যবহারের জন্য যেসব পণ্য ব্যবহার করে থাকি অধিকাংশ আমাদের দেশের তৈরি হয়না বিদেশে থেকে আমাদের দেশে আসে। আমরা যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করি সেটাও বাহিরের, যে সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকি ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব এগুলো সবই বাহিরের। এগুলো না থাকলে আমাদের ডেইলি জীবন অন্য রকম হয়ে যেতো।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব:
চাহিদা পূরণ করে:
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা পূরণের জন্য আমরা কোন না কোন দেশে উপর নির্ভর করে থাকি। একটি দেশে যা উৎপাদন হয় না, সেটি অন্য দেশ থেকে আনা যায়।
দামের ভারসাম্য আনে:
বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতা দাম নিয়ন্ত্রণে রাখে। মনে করুন, ভারত কাপড় উৎপাদন করে, বাংলাদেশ ও কাপড় উৎপাদন করে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশর গার্মেন্টস বড় পশ্চিমা বিশ্বে। আমাদের দেশের তৈরি কাপড় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পরিধান করে থাকে। এই দুই দেশের একই পণ্য উৎপাদন করাতে বিশ্ববাজারে দামের একটা ভারসাম্য তৈরি হয় কোয়ালিটি উপর।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নত করে:
বাণিজ্যিক লেনদেন বিভিন্ন দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। যাদের সাথে লেনদেন আছে তারা আপনাকে মাথার উপরে তুলে রাখবে। ভালো সম্পর্কে করতে চাইলে তার সাথে লেনদেন ঠিক রাখতে হয় তাহলে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে কেমন তা বুঝা যায়, বাংলাদেশ এর সাথে চীনের একটা ভালো সম্পর্ক আছে তা বিশ্ব মানের।
আরও পড়তে পারেন:
বাংলাদেশে গুগল পে (Google Pay Bangladesh): সুবিধা, অসুবিধা ও ব্যবহারবিধি
হরমুজ প্রণালী: বিশ্বের জ্বালানি নিরাপত্তার দ্বাররক্ষী
বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায় কি?
বাংলাদেশ সরকারের আয়ের প্রধান উৎস কি
রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পায়:
দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় মাধ্যম। আমাদের দেশে গার্মেন্টস থেকে যে ডলার উৎপাদন হয় সবই বৈদেশিক মুদ্রা, আমাদের কাপড় অন্য দেশের লোকোরা পড়ে বিদায় আমাদের রিজার্ভ বৃদ্ধি পায়।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দুইভাবে হয়ে থাকে :
১. রপ্তানি (Export):
২. আমদানি (Import):
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা ও অসুবিধা
সব জিনিস এর সুবিধা অসুবিধা রয়েছে ঠিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সুবিধা ও অসুবিধা গুলো কী কী:
সুবিধা:
- পণ্যের বৈচিত্র্য বিভিন্ন দেশের নানা পণ্য পাওয়া যায়।
- উন্নত প্রযুক্তি পাওয়া যায় বিদেশ থেকে ফলে দেশে আধুনিক প্রযুক্তি আমদানি করা সম্ভব।
- দক্ষতা বৃদ্ধি পায় প্রতিযোগিতার কারণে উৎপাদন মান বাড়ে।
- বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন রপ্তানির মাধ্যমে ডলার আয় করা যায়।
- কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য নতুন চাকরি তৈরি হয়।
অসুবিধা:
- স্থানীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হেরে যায় ফলে দেশের তৈরি পণ্য চাহিদা কমে যায়।
- বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে দেশে প্রভাব পড়ে।
- অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা হয়ো পড়ে।
- বিদেশের উপর বেশি নির্ভরশীল বেড়ে যায়।
- সংস্কৃতির উপর প্রভাব পড়ে।
- বিদেশি সংস্কৃতির প্রচারে নিজস্ব সংস্কৃতি ঝুঁকিতে পড়ে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কীভাবে কাজ করে?
বাংলাদেশ চাইলে কোন দেশ থেকে হুট করে কোন কিছু আনতে পারবে না তার জন্য ওই দেশের সাথে কিছু চুক্তি করতে হবে তাহলে আন্তর্জাতিক ভাবে বাণিজ্য সম্ভব হবে। মনে করুন আমরা পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আনবো তাহলে পাকিস্তান সরকার এর সাথে আমাদের চুক্তি করতে হবে তাদের উৎপাদন কৃত পেঁয়াজ আমাদের দেশে আনার জন্য।
- একটি দেশ পণ্য উৎপাদন করে।
- অন্য দেশ সেটা কিনতে আগ্রহী হয়।
- আন্তর্জাতিক লজিস্টিকস ও চুক্তির মাধ্যমে পণ্য পাঠানো হয়।
- ব্যাংকে বৈদেশিক লেনদেনে অর্থ প্রদান করা হয়।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাংলাদেশে কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। আমাদের রপ্তানি আয়, বিশেষ করে গার্মেন্টস খাত, দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি।
- গার্মেন্টস রপ্তানি
- কৃষিপণ্য রপ্তানি
- ফার্মাসিউটিক্যালসের সম্ভাবনা
এই খাতগুলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে আমাদের আয় বাড়ায়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।
চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান বিশ্বের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ। এই দেশের উওর নির্ভর করে আমাদের আমাদানি আর রপ্তানি।
ই-কমার্স ও ডিজিটাল সার্ভিসের কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এখন শুধু পণ্য নয়, ভার্চুয়াল সেবাও অন্তর্ভুক্ত করছে
সর্বশেষ,
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আমাদের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এই বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ সব দেশ নিজের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে তুলে।
আপনি যদি অর্থনীতি, ট্রেড বা ব্যবসা নিয়ে আগ্রহী হন, তাহলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিষয়টি জানাটা আপনার জন্য একান্ত প্রয়োজন।
এই পোস্টটি শেয়ার করুন যদি এটি উপকারী মনে হয়।আমাদের টেলিগ্রাম জয়েন করতে ভুলবেন না।