হরমুজ প্রণালী: বিশ্বের জ্বালানি নিরাপত্তার দ্বাররক্ষী

হরমুজ প্রণালী (Strait of Hormuz) বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে কৌশলগত ও স্পর্শকাতর সামুদ্রিক জলপথগুলোর একটি। এটি শুধু ভৌগোলিক সীমানা নয়, বরং ইরানে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্ত্র, যার উপর নির্ভর করে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজার।
প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ব্যারেল তেল এই প্রণালী দিয়ে পরিবাহিত হয়, যা বিশ্বের মোট তেল সরবরাহের প্রায় ২০ শতাংশ। হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্বজুড়ে তেলের দাম, পণ্য পরিবহন, রাজনীতিতে বিশাল প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ সহ আরও বিভিন্ন দেশে জিনিসপত্র দান বেড়ে যাবে হা হা করে এতে ভোগান্ত পড়বে সাধারণ মানুষ।
হরমুজ প্রণালী কি?
হরমুজ প্রণালী হচ্ছে একটি সংকীর্ণ, অথচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক জলপথ, যা পারস্য উপসাগরের তেল-সমৃদ্ধ দেশগুলোকে বিশ্বের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযুক্ত রাখে। ভূ-রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বের কারণে এটিকে বলা হয়:
বিশ্বের তেলের লাইফলাইন
হরমুজ প্রণালী কোথায় অবস্থিত?
হরমুজ প্রণালী অবস্থিত পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগরের মধ্যবর্তী স্থানে। এটি পশ্চিম এশিয়ার একটি সংকীর্ণ জলপথ যা উত্তরে ইরান এবং দক্ষিণে ওমানের মুসান্দাম উপদ্বীপ দ্বারা সীমাবদ্ধ।
- দৈর্ঘ্য: প্রায় ১৬৭ কিলোমিটার
- প্রস্থ: সর্বনিম্ন ৩৯ কিলোমিটার
- গভীরতা: প্রায় ৬০ মিটার
এই প্রণালীকে বলা হয় “জ্বালানির দরজা”, এই দরজা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো তেল রপ্তানি করে থাকে। এটা না থাকলে মধ্যপ্রাচ্যের তেল পশ্চিমা বিশ্বে তেল সরবরাহ করা যাবে না। ইউরোপ, আমেরিকা সহ্য অনেক দেশ রাশিয়ার তেলের উপর নির্ভর করতে হবে।
হরমুজ প্রণালী এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
হরমুজ প্রণালীর গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে গেলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ দেখা যায়:
- জ্বালানি পরিবহনের লাইফলাইন
- বিশ্বের মোট রপ্তানিকৃত তেলের ২০% এই পথ দিয়ে যায়।
- প্রতিদিন প্রায় ২০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পরিবাহিত হয় এই প্রণালী দিয়ে।
- প্রতিবছর প্রায় ২০০০টি তেলবাহী জাহাজ এই পথ ব্যবহার করে।
- কৌশলগত সামরিক গুরুত্ব
- এটি এমন একটি chokepoint (সংকীর্ণ স্থান), যেটি কোনো দেশ সাময়িকভাবে বন্ধ করতে পারলে, পুরো বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহে প্রভাব ফেলতে পারে।
- অর্থনৈতিক ইমপ্যাক্ট
- যদি প্রণালী বন্ধ হয়, বিশ্বজুড়ে তেলের দাম আকাশছোঁয়া হতে পারে।
- এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ে এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়।
হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিতে পারে ইরান?
ইরান বহুবার হুমকি দিয়েছে যে তারা প্রয়োজনে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেবে। বিশেষ করে যখন:যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা শক্তি তাদের তেল রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
- সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়
- ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাত বাড়ে
২০১৯ সালে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনার সময় ইরান ঘোষণা দেয়:যদি আমাদের তেল রপ্তানিতে বাধা দেওয়া হয়, তবে কেউই পারস্য উপসাগর দিয়ে তেল পাঠাতে পারবে না।
এই হুমকির পরে পুরো বিশ্বের তেলের দাম বেড়ে যায় এটা শুধু হুমকি ছিলো যদি বন্ধ করে দিলে বিশ্বের মধ্যে মন্দা শুরু হবে। এই হুমকি শুধুমাত্র রাজনৈতিক ছিল না, বরং তৎকালীন তেলের বাজারে ৫-১০% দাম বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট ছিল।
এই ঘোষণা পরেও ইরান এই প্রণাণি বন্ধ করে দেয় নাই। তবে বর্তমান ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ এটা বেশ সামনে এসেছে এই বিষয়টি।
ক্ষুদ্র ব্যবসার তালিকা: বাংলাদেশে শুরু করার সেরা ব্যবসার আইডিয়া
গ্রামে অল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করার দারুণ উপায়
ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করার ধারাবাহিক ধাপসমূহ কি কি?
ঢাকা শহরে ব্যবসার আইডিয়া? অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা
হরমুজ প্রণালী কোন দেশের দখলে?
হরমুজ প্রণালী দুটি দেশের মাঝখানে অবস্থিত:
উত্তর দিকে: ইরান
দক্ষিণ দিকে: ওমান (মুসান্দাম উপদ্বীপ)
যদিও এটি আন্তর্জাতিক জলপথ হিসেবে চিহ্নিত, তবে ইরান এর ওপর কিছু অংশে নৌবাহিনী ও সামরিক নজরদারি চালায়। ফলে এখানে নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটি খুবই সংবেদনশীল। ইরান কাছাকাছি হওয়ায় এটা বন্ধ করে দিতে পারে যে কোন সময়।
হরমুজ প্রণালী কোন কোন দেশকে পৃথক করেছে?
হরমুজ প্রণালী মূলত নিম্নলিখিত দেশগুলোকে প্রাকৃতিকভাবে পৃথক করেছে:
- ইরান (উত্তর)
- ওমান (দক্ষিণ)
পাশের দেশগুলো: ইরাক, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত
এই দেশগুলো আবার এই প্রণালীর মাধ্যমেই সমুদ্রপথে বিশ্ববাজারে যুক্ত।
সর্বশেষ
হরমুজ প্রণালী শুধুমাত্র একটি সামুদ্রিক পথ নয় — এটি বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনীতি ও শক্তির কেন্দ্রবিন্দু। এর উপর নির্ভর করে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রা। এই প্রণালীর নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা তাই শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নয়, বরং পুরো বিশ্বের দায়িত্ব।
এই পোস্টটি শেয়ার করুন যদি এটি উপকারী মনে হয়।আমাদের টেলিগ্রাম জয়েন করতে ভুলবেন না।