Skip to content

সমবায় সমিতি কাকে বলে? সমবায় সমিতির কাজ কী?

  • by

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো সমবায় সমিতি। এটি এমন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যেখানে একদল ব্যক্তি নিজেদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একত্রিত হয় কাজ করে থাকে। মূলত, এটি “একতাই শক্তি” নীতির উপর ভিত্তি করে কাজ করে, যেখানে সদস্যরা সমানভাবে দায়িত্ব ও সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে।

আজকে আমরা এই পোস্ট থেকে জানবো সমবায় সমিতি কি করে কাজ করে? সমবায় সমিতি কি জন্য প্রয়োজন? সমবায় সমিতি গঠনমূলক কাজ কি?

সমবায় সমিতি বলতে কী বোঝায়?

সমবায় সমিতি (Cooperative Society) হল এমন একটি আর্থিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান যেখানে সদস্যরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য একত্রিত হয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করে। এটি মূলত লাভের পরিবর্তে সদস্যদের কল্যাণে কাজ করে এবং সকল সদস্য সমান সুবিধা নিয়ে থাকে। একটা সমবায় সমিতিতে সব সদস্য একই সাথে একই রকম সুযোগ পেয়ে থাকে।

সমবায় সমিতির সংজ্ঞা?বাংলাদেশের সমবায় সমিতি আইন, ২০০১ অনুসারে, সমবায় সমিতি হল একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, যেখানে ব্যক্তিরা স্বেচ্ছায় একত্রিত হয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে নিজেদের আর্থিক ও সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিত করে থাকে।

সমবায় সমিতির ইতিহাস

বাংলাদেশে সমবায় আন্দোলনের শুরু হয় ব্রিটিশ আমলে। ১৯০৪ সালে ব্রিটিশ সরকার “The Cooperative Credit Societies Act” প্রণয়ন করে। এরপর ১৯২৫ সালে “The Cooperative Societies Act” কার্যকর হয়, যা সমবায় ব্যবস্থাকে আরও সুসংগঠিত করে।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার সমবায় উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং সমবায় ব্যাংক, কৃষি সমবায় সমিতি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

বর্তমানে, বাংলাদেশে সমবায় অধিদপ্তরের (Department of Cooperatives) তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন ধরনের সমবায় সমিতি পরিচালিত হয়।

সমবায় কি এবং কেন?

সমবায় হলো পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের একটি পদ্ধতি। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য একটি কার্যকরী ব্যবস্থা, যা ঋণ সুবিধা, সঞ্চয় ব্যবস্থা, ব্যবসা প্রসার, দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।

কেন সমবায় গুরুত্বপূর্ণ?

  • সদস্যদের আর্থিক স্বাধীনতা দেয়।
  • বেকারত্ব কমাতে সাহায্য করে।
  • সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।
  • বিনা সুদে ঋণ নেওয়া যায়।
  • একজন সদস্য আরেক সদস্যদের কে যে কোন বিপদে সহযোগিতা করতে পারে।

সমবায় সমিতির বৈশিষ্ট্য

গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ: প্রতিটি সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে। সব সদস্য তার ইচ্ছে মতো ব্যক্তিকে ভোট দিতে পারে।ভোট আমাদের মৌলিক অধিকার বিগত ১৫ বছর ধরে আওয়ামীলীগের শাসন আমলে এই ভোট অধিকার নষ্ট হয়েছে। এই প্রভাব কিন্তু সমবায় সমিতিতে ইফেক্ট করেছে। কথা আছে না,জোর যার মূল তার।

সদস্যদের স্বেচ্ছাসেবী অংশগ্রহণ: কেউ চাপে পড়ে নয়, বরং স্বেচ্ছায় সদস্য হন। এখানে সদস্য হতে কোন জোরাজোরি নাই। মন চাইলে সদস্য হবো মন না চাইলে সদস্য পদ বাতিল করবো এটা হলো সমবায় সমিতি মূল গঠন।

লাভ ভাগাভাগি: সদস্যরা প্রতিমাসে একটা নির্ধারুিত টাকা জমা দিয়ে থাকে। এই জমা কৃত টাকা দিয়ে সমিতির নামে বিভিন্ন ব্যবসা করা যায়। এই অর্জিত মুনাফা সকল সদস্যের মধ্যে ন্যায্যভাবে বিতরণ করা হয়।

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান: সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকলেও এটি স্বায়ত্তশাসিতভাবে পরিচালিত হয়। সরকারের হাতে নিয়ন্ত্রণ না রেখে ভোটের মাধ্যমে যে-কেউ নির্বাচিত হয়ে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন পদ নিতে পারে।

সদস্যদের কল্যাণ: সমাজের উন্নয়ন এর জন্য সমবায় সমিতি ধারণা গঠন করা হয় ১৯৭২ সালে। যাতে করে গ্রাম অঞ্চলের মানুষের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারে।

সমবায় সমিতির কাজ কী? (What is the function of the cooperative society)

সমবায় সমিতির কাজ সাধারণত সদস্যদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের দিকে কেন্দ্রীভূত। সদস্যরা যে কোন বিপদের সময় এখান থেকেই বিভিন্ন রকমের সুযোগ সুবিধা নিতে পারে।

সদস্যদের জন অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করতে পারবে। সদস্যদের জন্য সহজে বিনা শর্তে ঋণ সুবিধা প্রদান করতে বাধ্য।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ব্যবসার মূলধন সংগ্রহের সুযোগ করে দেওয়া। বিনা সুদে ঋণ দিয়ে সমাজের উন্নয়ন কে অভ্যহত রাখা।

কৃষি ও শিল্প উন্নয়ন জন্য অবধান রাখা।কৃষকদের জন্য সস্তায় সার, বীজ, কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা যাতে কৃষক সহজে কৃষি কাজ করতে পারে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের জন্য প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদান করা। ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা।

মধ্যস্বত্বভোগীদের লাভ কমিয়ে সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য সরবরাহ করা। ভোক্তা সমবায়ের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা।

আরও পড়তে পারেন:

ঢাকা শহরে ব্যবসার আইডিয়া? অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা

ক্ষুদ্র ব্যবসার তালিকা: বাংলাদেশে শুরু করার সেরা ব্যবসার আইডিয়া

বেকার যুবকদের জন্য প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। মহিলাদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলা যাতে মেয়েরা সমাজের জন্য বোঝা না হয়ে সফল একজন উদ্যেক্তা হতে পারে।

সমবায় সমিতির সুবিধা ও অসুবিধা

সমবায় সমিতির সুবিধা

  • সদস্যদের নিয়মিত সঞ্চয় করার সুযোগ দেয়।
  • সাধারণ ব্যাংকের চেয়ে কম সুদে ঋণ পাওয়া যায়।
  • গরিব মানুষকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে।
  • কৃষক, শ্রমিক, নারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে।
  • এটি সরকারনির্ভর নয়, বরং সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হয়।

সমবায় সমিতির অসুবিধা

  • দক্ষ ম্যানেজমেন্ট কারণে অনেক সমিতি ব্যর্থ হয়।
  • অনিয়ম ও দুর্নীতি কারণে সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • অধিকাংশ সমবায়ের মূলধন সীমিত, যা বড় উদ্যোগ নিতে বাধা সৃষ্টি করে।

সমবায় সমিতি করতে কী কী লাগে?

একটি ভালো সমবায় সমিতি গঠনের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অনুসরণ করতে হয়।

সদস্য সংগ্রহ : একটা সমবায় সমিতিতে কমপক্ষে ২০ জন সদস্য থাকতে হবে। কম সদস্য হলে এটাকে সমবায় সমিতি বলা যাবে না।সদস্যদের অবশ্যই একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকতে হবে।সদস্য যেন খারাপ কাজে লিপ্ত না থাকে এটার দিকেও লক্ষ্য রাখতে হয়।

সমিতির নাম ও লক্ষ্য নির্ধারণ: সমিতির একটি সুনির্দিষ্ট নাম ও লক্ষ্য থাকা জরুরি। আপনাদরে সমতির নাম রাখতে পারে উদয়ন মানব কল্যাণ সমিতি, উদয়ন যুব কল্যান সমিতি, আপনার এলেকার নাম দিয়েও সমিতি করতে পারবেন।

নিবন্ধন: সমবায় অধিদপ্তর (Department of Cooperatives) থেকে আইনি নিবন্ধন করাতে হবে। আইনি জটিলতা এড়াতে এটা করা উচিত। যেহেতু টাকা লেনদেন হবে এই সমিতি তে অবশ্যই সমাজসেবা অধিদপ্তরে থেকে প্রয়োজনিয় লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে।

নিবন্ধনের জন্য নির্দিষ্ট নথিপত্র ও ফি জমা দিতে হবে। প্রতিটি সদস্যের কাছ থেকে শেয়ার মূলধন সংগ্রহ করতে হবে।সমিতির মূলধন ব্যাংকে জমা রাখতে হবে।

পরিচালনা কমিটি গঠন: সভাপতি, সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ করতে হবে। সদস্যদের ভোটে দ্বারা নির্বাচিত হতে হবে। পরিচালনা কমিটি সমিতির নীতি ও কর্মসূচি নির্ধারণ করবে। বিনা ভোটে কেউ যেন নিবার্চিত না হয় এটা লক্ষ্য রাখতে হবে।

সমবায় সমিতির নীতিমালা : বাংলাদেশের সমবায় সমিতি প্রচলিত আইনের প্রতি সম্মান থাকতে হবে। ২০০১ সালের নিয়ম অনুযায়ী সমবায় সমিতির প্রধান নীতিগুলো হলো—

  • স্বেচ্ছাসেবী সদস্যপদ – কেউ জোরপূর্বক সদস্য হতে পারবে না।
  • গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ – প্রতিটি সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকবে।
  • অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ – সদস্যদের সমবায়ের উন্নতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
  • স্বায়ত্তশাসন – এটি স্বাধীনভাবে পরিচালিত হবে।
  • শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ – সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

আরও পড়তে পারেন:

বাৎসরিক আয় বলতে কী বোঝায়?বার্ষিক আয় কেন প্রয়োজন?

বাংলাদেশ সরকারের আয়ের প্রধান উৎস কি

মাসিক আয় বলতে কি বুঝায়: কিভাবে পরিচালনা করবেন

২ হাজার টাকা দিয়ে কীভাবে ব্যবসা শুরু করবেন

সর্বশেষ,

সমবায় সমিতি একটি কার্যকরী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মাত্র। সমাজের আর্থিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে থাকে। একটা সমিতির জন্য দেশ ও সমাজ উভয় উপার হয়। দেশে দেশে উদ্যেক্তা তৈরি হয় বেকারত্ব হার কমে।

সব কিছুর ভালো আর খারাপ দিক দুইটি আছে। ভালো ব্যবস্থাপনা ও নীতিমালা অনুসরণ করতে না পারলে যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে। দক্ষ লোক যদি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক না হয় তাহলে সমতির অবকাঠামো ভেঙে পড়তে পারে। চেষ্টা করুন ভালো একজন মানুষকে যোগ্যস্থানে বসাতে।

এই পোস্টটি শেয়ার করুন যদি এটি উপকারী মনে হয়।আমাদের টেলিগ্রাম জয়েন করতে ভুলবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *