ব্যবসা শুরু করতে হলে বড় পুঁজির প্রয়োজন। বড় ব্যবসা শুরু করতে বড় পুঁজি লাগে ছোট ব্যবসার জন্য অল্প টাকা দিয়েও শুরু করা যায়। সামান্য পুঁজি দিয়েও সঠিক পরিকল্পনা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে লাভজনক ব্যবসা শুরু করা যায়। ঢাকার মতো শহরে যেখানে চাহিদা বেশি, সেখানে ২ হাজার টাকা ব্যবসার কথা ভাবাও মুশকিল।
২ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করতে হলে ব্যস্ততম শহরে শুরু করা উচিত।বিশেষ করে, ঢাকা, চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট ইত্যাদি এসব জায়গায় ব্যবসা শুরু করা যায় কম টাকায়। আজকের পোস্ট আমরা আলোচনা করবো মাত্র ২ হাজার টাকায় কীভাবে ব্যবসা শুরু করা।
ঢাকায় ২ হাজার টাকা দিয়ে কী ব্যবসা করা যায়?
হ্যা সম্ভব! ঢাকা হলো বাংলাদেশের রাজধানী। এই শহর শুরু হয় সকালে ব্যস্ততার মাঝে শেষ হয় রাতে ক্লান্ত মাঝে।সবার মনে প্রশ্ন থাকে ছোট পুঁজি দিয়ে কি করে ব্যবসা শুরু করা যায়। কি ব্যবসা করলে লাভবান হওয়া যায়। ইউনিক কিছু দিয়ে শুরু করা যেতে পারে।
পান-সুপারি:
কম টাকায় শুরু করার সবচেয়ে সহজ ব্যবসা হলো এটা। মাত্র ২ হাজার টাকায় এই ব্যবসা শুরু করা যায়। বাংলাদেশ মানুষ পান বেশি খাইয়া থাকে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আপনি ঢাকার মধ্যে পান বিক্রি করতে পারেন।
পান সুপারির দাম তুলনামূলক ভাবে সস্তা। ঢাকা শহরে ট্রাপিক জাম বেশি, এই জামে আপনি পান বিক্রি করতে পারেন। যারা পান খাই তারা পান দেখলে লাফিয়ে পড়বে খাওয়া জন্য। সামান্য পরিমাণ বাজেট দিয়ে শুরু করা যায়।
পুঁজি হিসাবে লাগবে ৩-৫ শত টাকার পান, ৩-৫ শত টাকার সুপারি, সুপারি কাঁটার জন্য একটা বটি লাগবে ২-৩ শত টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে, আর সামান্য পরিমাণে চুন আর পানের মশলা।২০০০ টাকার মধ্যে এসব পাওয়া যাবে।
প্রতিদিন লাভ হবে ৫০০-৭০০ টাকা। একটু ভেবে দেখুন তো। ২ হাজার টাকা ইনভেস্ট করে ৫-৭ শত টাকা আয় করা কত সহজ।টাকা আয় করা যাবে তবে আপনার থেকে লজ্জা থাকা যাবে না। লজ্জা থাকলে এই ব্যবসা আপনার জন্য না, শত শত মানুষ এই ব্যবসা করে থাকে।
ডেইলি ৫০০ পিস মান বিক্রি করলে প্রতি পান থেকে ১.২৫ টাকা লাভ থাকলে ৫০০ x ১.২৫ = ৬২৫ টাকা লাভবান হওয়া সম্ভব। ডেইলি পরিশ্রম করবেন, ডেইলি আয় হবে এই ব্যবসা স্বাধীন বসের ঝামেলা নাই। যখন মন চাইবে তখন কাজ করে রেস্ট নিতে পারবেন।
ঘরে তৈরি খাবারের ব্যবসাঃ
সময় অনেক মূল্যবান।এই সময় বাঁচাতে হাজার হাজার মানুষ অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হতে হতে দেরি হয়ে যায়। তখন বাধ্য হয়ে বাহিরে নাস্তা করতে হয়। এই দেরী হওয়াকে কাজে লাগিয়ে শুরু করতে পারেন আপনার খাবারের ব্যবসা।
কর্মব্যস্ত মানুষ ঘরে তৈরি খাবারের প্রতি খুবই আগ্রহী। যদি ভালো কোয়ালিটি খাবার সরবরাহ করতে পারেন তাহলে আপনার ব্যবসা হবে লাভজনক।এই ব্যবসার চাহিদা সবসময় থাকে ব্যস্ততম সকল শহরে।
খাবারের আইটেম,
- পিঠা,
- স্ন্যাকস (শিঙ্গাড়া, সমুচা),
- লাঞ্চ বক্স।
এগুলো দিয়ে শুরু করা যায় প্রাথমিক অবস্থায়।স্বাস্থ্যসম্মত ও ঘরোয়া রান্নার প্রতি মানুষের আস্থা বেশি।শুরু করার উপকরণ: চাল, ডাল, ময়দা, তেল, এবং প্রয়োজনীয় কাঁচামাল।২ হাজার টাকায় কাঁচামাল কিনে এটা অনায়েসে শুরু করা যায়।
বিক্রির কোথায় করবেন? নতুন অবস্থায় আপনাকে বেশি পরিশ্রম করতে হবে।হাইওয়ে, ট্রাফিক জামে,আশপাশের অফিস, স্কুল-কলেজের সামনে বিক্রি। করতে পারেন। প্রতিদিন লাভ ৪০০-৬০০ টাকা লাভ করা সম্ভব। যদি পিঠা তৈরি করেন, প্রতিদিন ২০০ পিস তৈরি করলে এক পিস ১০ টাকা করে বিক্রি করলে প্রতি পিস থেকে ২-৩ টাকা লাভবান হওয়া সম্ভব।
যদি ভাতের প্যাকেজ বিক্রি করেন তাহলে, প্রতিটি প্যাকেটে ১৫-৩০ টাকা লাভ পাওয়া সম্ভব। দিনে ৩০টি বিক্রি করলে আয় ৪৫০-৯০০ টাকা।
আজই শুরু করুন আপনার বিজনেস, ব্যবসায় লাভবান হওয়া যায় যদি পরিশ্রম আর বুদ্ধি থাকে তাহলে।
পোশাক বিক্রি:
ঢাকার পাইকারি বাজার থেকে সস্তায় পোশাক কিনে বিক্রি করা খুবই লাভজনক। এটি করতে একটু পুঁজি বেশি লাগবে ২ হাজার টাকায় করা সম্ভব না। জাস্ট কয়েকটি পোশাক ক্রয় করতে পারবেন এটি দিয়ে বিজনেস করা খুবই টাপ একটা ব্যাপার।
গুলিস্তান, চাঁদনী চক, বা ইসলামপুর থেকে সস্তায় থ্রি-পিস, টি-শার্ট, বা বাচ্চাদের জামা কিনুন। ২ হাজার টাকায় ৫-১০টি পণ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। এই ৫-১০ টি দিয়ে শুরু করলে একদম কম লাভবান হওয়া যায়,এই ব্যবসায় আপনার পুঁজি থাকতে হয়, পুঁজি না থাকলে বেশিদূর আগানো সম্ভব না।
বিক্রির কোথায় করবে? সবচেয়ে ভালো হয় পরিচিতদের মাঝে বিক্রি করলে।প্রতিবারতো পরিচিত লোকরা নিবে না। বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে, রেললাইন, কোর্টবিল্ডিং ইত্যাদি এসব জায়গায়।
লাভের হিসাব করলে বেশি লাভবান হওয়া যাবে না, প্রতি পোশাকে ৭০-১০০ টাকা লাভ পাওয়া যাবে। লাভ যায় হোকনা কেন এটা আপনি ধরে রাখতে পারলে আপনার ব্যবসা হবে অনেক বড়।
মাস্ক, ব্যাগ, ও অন্যান্য ছোট পণ্য:
ছোটখাটো প্রয়োজনীয় পণ্য আমাদের সবারই লাগে। মাস্ক, গিফট ব্যাগ, মানি ব্যাগ,কানের কটন, টুথ পিক, আরও অনেক ছোটখাটো জিনিস লাগে যা বাসা থেকে বাহির হওয়ার সময় আনতে মনে থাকে না।
ঢাকা শহরে ব্যবসার আইডিয়া? অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা
ক্ষুদ্র ব্যবসার তালিকা: বাংলাদেশে শুরু করার সেরা ব্যবসার আইডিয়া
ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করার ধারাবাহিক ধাপসমূহ কি কি?
এইসব জিনিস বিক্রি করা খুব জনপ্রিয় যে কেউ এসব পণ্য নিতে আগ্রহি।যেভাবে শুরু করবেন সেটা হলো বড় কথা পাইকারি দামে ২ হাজার টাকার মাস্ক বা অন্যনা জিনিস ক্রয় করুন।স্কুল,অফিস, ট্রাফিক জ্যামে, পারিবারিক অনুষ্ঠানে এগুলো বিক্রি করার মতো। প্রতিটি পণ্যে ভেদে ২-৮ টাকা লাভ পাওয়া সম্ভব।
অনলাইনে ২ হাজার টাকায় ব্যবসা শুরু করার উপায়
আমরা ইতিমধ্যে জেনে গেছি ব্যবসা করতে টাকা লাগে না তেমন। অফলাইন ব্যবসা সবচেয়ে জনপ্রিয় কম পুঁজির জন্য। যদি অনলাইনে ব্যবসা করতে চান তাহলে পুঁজি সাথে সাথে ধৈর্য লাগবে বেশি। এটা করা অনেক জনের জন্য সুখবর হবে না অনলাইন ইনস্টেন টাকা পাওয়া সম্ভব না। তবুও কয়েকটি ব্যবসার আইডিয়া সাজেশন করা হলো:
ফ্রিল্যান্স সেবা: এই ব্যবসা খুব লাভজনক একটা ব্যবসা যদি করা যায় তাহলে।সব মানুষের ব্যনার, লোগো, পোস্টার, ফেসবুক ব্যানার ইত্যাদি এইসব জিনিস লাগে। এমন পটেনশিয়ালটি কাস্টমার খোঁজন যে কিনা আপনার থেকে এসব ক্রয় করবে। আপনার ডিজাইন স্কিল প্রয়োজন নাই, আপনার অফিস প্রয়োজন নাই, আপনার কোন কিছু না থাকা সত্বেও এই ব্যবসা করতে পারবেন সহজে।
আপনার প্রয়োজন একটা বিজনেস কার্ড আপনার নামে, এটা দিয়ে আপনি মার্কেটিং করবেন এ-ই সব কাজ আপনি করে দিবেন এবং ফ্রিতে ডেলিভারি ও দিবেন। অনেক মানুষ এটাতে আগ্রহ দেখাবে এটাই হলো আপনার ব্যবসার মূল চাবিকাঠি।
শুরু করতে যা যা লাগবে আপনার। সামান্য পরিমাণে অভিজ্ঞতা যা চ্যাটজিপিটি আপনাকে দিবে। কথা বলার ধরন লাগবে ভালো, বডির ভাষা থাকতে হবে স্মুথ তাহলেই শুরু করতে পাবেন। কোথায় বিক্রি করবেন? বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, অফিস,হোটেল, রাজনীতি ব্যাক্তি, বিভিন্ন দোকান ইত্যাদি।
এখানে টাকার আয় করার লিমিট তেমন নিদিষ্ট না, যত প্রজেক্ট আসবে ততই আয় হবে। তবে প্রতিমাসে ২০-৩০ হাজার টাকা পযন্ত আয় করা সম্ভব যদি আপনার মার্কেটিং এবং পরিশ্রম করে থাকেন তাহলে।
অনলাইন রিসেলিং ব্যবসা: পাইকারি দামে পণ্য কিনে অনলাইনে বিক্রি করা খুব জনপ্রিয় একটা মাধ্যম।বিভিন্ন জায়গা থেকে কম দামে পণ্য সংগ্রহ করে এটা অনলাইন বিক্রি করতে পারলে প্রোফিট থাকে ভালো।
পাইকারি মার্কেট থেকে খেলা,জুতা, কসমেটিক্স, ব্যাগ প্রোডাক্ট ক্রয় করে।এটা দিয়ে প্রাথমিক ভাবে শুরু করা যায়। পণ্যের বিক্রি করার জন্য সেরা চয়েস হতে পারে Facebook Marketplace, Instagram, WhatsApp, Daraz এর মাধ্যমে বিক্রি শুরু করুন।
যেহেতু অনলাইনে ব্যবসা তাই লাভ লোকসান হিসাব করা মুশকিল। এটার জন্য ভালো ইনভেস্ট প্রয়োজন, তবুও লাভ করা সম্ভব। ২ হাজার টাকায় ১০-১৫টি পণ্য কিনে প্রতিটি পণ্যে সামান্য করে লাভ করতে পারেন।
কম টাকায় ব্যবসা লাভজনক হয় কিভাবে?
কম খরচে শুরু করে ধীরে ধীরে ব্যবসা বড় করার চেষ্টা করুন। খরচ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ব্যবসা লাভজন হবে। যে কোন জিনিস ক্রয় করার আগে স্থানীয় বাজারের দাম যাচাই করে নিন তাহলে টাকা নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়িয়ে চলুন। আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনেক খরচ করে থাকি সেগুলো অযথা খরচ।এই খরচ গুলো পরিহার করতে পারলে দেখবেন লাভের হিসাব টা একটু বেশি হচ্ছে। কয়েকটি পয়েন্ট মনে রাখবেন দেখবেন কম পুঁজিতে ও বড় ব্যবসা করা সম্ভব।
- পুঁজির সঠিক ব্যবহার।
- অনলাইনে ব্যবসা বাড়ানো।
- কম খরচে ব্র্যান্ড প্রচারণা করা।
- ক্ষুদ্র ব্যবসার মডেল।
- মুনাফা পুনঃবিনিয়োগ করুন।
- প্রতিদিনের হিসাব রাখা।
- সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।
- কর্মিদের পরিমাজর্ন করা।
- লাভের হিসাব আলাদা করা।
- মান বজায় রাখা।
সর্বশেষ,
ঢাকার মতো শহরে মাত্র ২ হাজার টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করা একেবারে অসম্ভব না।ব্যবসার মূল চাবিকাঠি হলো সঠিক পরিকল্পনা, ধৈর্য, এবং পরিশ্রম। ছোট শুরু হলেও ধীরে ধীরে পুঁজির পরিমাণ ও লাভ বাড়ানো সম্ভব।
আপনার ব্যবসার যাত্রা শুরু করার জন্য উপরের যে কোনো আইডিয়া বেছে নিন এবং আজ থেকেই কাজ শুরু করুন। আপনার সাফল্যের পথের যাত্রা শুরু করুন আজই।
এই পোস্টটি শেয়ার করুন যদি এটি উপকারী মনে হয়।আমাদের টেলিগ্রাম জয়েন করতে ভুলবেন না।