বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে তালিকায় নাম চলে এসেছে। এই উন্নয়নশীল দেশে ক্ষুদ্র ব্যবসার তালিকা করতে গেলে অনেক লিস্ট চলে আসবে।
বর্তমান সময়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করা একটি ভালো পদক্ষেপ। ব্যবসা মানে আয়ের উৎস নই,এই ব্যবসা থেকে মানুষের আয় হবে এমন নই বরং একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। একজন উদ্যােক্তা কারণে আরও ৪-৫ জন মানুষের কর্ম সৃষ্টি হয়।
একজন উদ্যােক্তার প্রধান সমস্যা হলো পুঁজি।আপনার পরিকল্পনা ঠিক থাকলে পুঁজি তেমন প্রয়োজন হয় না।পুঁজি কম হলেও সঠিক পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি সফল ব্যবসা গড়ে তুলা যায়। এই ব্লগ পোস্টে আমরা সেরা ক্ষুদ্র ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করবো।
Table of Contents
কয়েকটি ক্ষুদ্র ব্যবসার তালিকা?
এই ব্যাবসা অল্প পুঁজিতেও শুরু করতে পারবেন যদি আপনার কাছে সঠিক পরিকল্পনা এবং মনের মধ্যে সাহস থাকে তাহলে।
ডিজিটাল সার্ভিস:
স্কিল হলো মানুষের আয় করার বড় মাধ্যমে। বর্তমান সময়ে কাজের দক্ষতা না থাকলে বেশিদূর এগোতে সম্ভব না।আপনার কি দক্ষতা আছে সেটা দিয়ে আয় করুন। যদি ডিজিটাল সার্ভিসের আগ্রহী হন তাহলে ফ্রিল্যান্সিং হলো সবচেয়ে ভালো একটা মাধ্যম। ফ্রিল্যান্সিং এর চাহিদা সবসময় হাই ডিমান্ড থাকে। ভালো স্কিলের মধ্যে সবচেয়ে ডিমান্ড এর কাজ হলো ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং।
এইসব কাজে চাহিদা সবসময় থাকে শুধু অনলাইনে না অফলাইনে ও এসব কাজের চাহিদা থাকে।কাজের প্ল্যাটফর্ম, Fiverr, Upwork, LinekdIn এর মতো সাইট।
পুঁজি লাগবে একটি ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেট সংযোগ।কেন করবেন?সময়ের স্বাধীনতা। কাজের চাহিদা বেশি। আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের সাথে কাজ করার সুযোগ। নিদিষ্ট কোন টেনশন নেই। যে কোন জায়গা থেকে কাজ করার সুবিধা আছে।
ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে নিজের উন্নতির সাথে সাথে পরিবারের চাহিদা ও মেটানো সম্ভব।
মাসিক আয় বলতে কি বুঝায়: কিভাবে পরিচালনা করবেন
রেমিট্যান্স মানে কি? প্রবাসী আয়ের অর্থনীতি
বাংলাদেশ সরকারের আয়ের প্রধান উৎস কি
স্ট্রিট ফুড বিজনেস:
ফাস্ট ফুডের চাহিদা সবসময়ই থাকে। আমরা কোথায় ঘুরতে গেলে এই ফাস্ট ফুডের স্টল দেখেছি। আমরা সাধারণত সন্ধার সময় বাহির হলে এই স্টল গুলো দেখতে পাই ঝাল মুড়ি, চনা মুড়ি তার মধ্যে উল্লেখ্য।
এই ফুডের চাহিদা থাকবে সবসময় তবে অধিকাংশ মানুষ এই ব্যবসা করতে পারবে না। স্ট্রিট ফুডের ব্যবসা ভালো আয় হয়।আয়ের সাথে এই ব্যবসার জন্য ভালো একজন রাধুনি প্রয়োজন।
এই ফুডের জন্য ইউনিক একটা ফুড আইডিয়া নিয়ে শুরু করা যেতে পারে। আইটেম হতে পারে, বার্গার, চটপটি, ফুচকা,চনা মুড়ি বা ঝাল মুড়ি এসব আইটেম দিয়ে শুরু করা যেতে পারে।
প্রাথমিকভাবে ১০,০০০-৫০,০০০ টাকায় শুরু করা সম্ভব। এই স্বল্প পুঁজি দিয়ে শুরু করা যায় ফাস্ট ফুডের ব্যবসা।
কেন করবেন? ক্রেতার চাহিদা থাকে সারাবছর। ভালো একটা স্কুল বা কলেজের আশেপাশে খোলা যায়। যেখানে মানুষের ভিড় থাকে এটাতে খুলা যেতে পারে।লাভ-লোকশান উভয় হতে পারে যদি আপনার কাছে সঠিক পরিকল্পনা না থাকে তাহলে।
কনভেনিয়েন্স স্টোর:
প্রতিটি এলাকায় মুদি দোকানের চাহিদা থাকে। আপনার এলেকায় একটা দোকান শুরু করতে পারেন অল্প টাকায়।এর চাহিদা ও আছে বেশ ভালো। এটা শুরু করার আগে আপনার এলেকায় দোকান সংখ্যা এবং মানুষের সংখ্যা কেমন এটা দেখে দোকান খুলা টা উওম হবে।
পণ্যের চাহিদা হতে পারে, চাল, ডাল, তেল, বিস্কুট, সাবান, টুথপেস্ট ইত্যাদি। পুঁজি প্রয়োজন ৫০,০০০-১,০০,০০০ টাকার। এই পুঁজিতে ছোট দোকান শুরু করা যায়।বর্তমান সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দাম বেশি হওয়াতে লাভ কিছুটা কম।
হাঁস-মুরগির খামার:
ডিম এবং মাংসের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। এটি একটি লাভজনক ব্যবসা। বাড়ির আশেপাশে ছোট করে স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করা যায়।মাত্র ৫-১০ হাজার টাকায় এই ব্যবসা শুরু করা যায় প্রাথমিক অবস্থায়। সবচেয়ে ভালো হয় দেশি মুরগীর খামার করা। খামার করা আগে আপনার এলেকায় দেশী মুরগীর চাহিদা কেমন। চাহিদা অনুযায়ী খামার করা ভালো না হলে লসে সম্মুখীন হওয়ার সম্ভবনা থাকে।৷ যদি আপনার এলেকায় ফার্ম মুরগী চাহিদা থাকে তাহলে ফার্ম মুরগী খামার করা উওম।
কম খরচে দ্রুত লাভজনক হওয়ার যায়। মুরগির চাহিদা সারা বছর থাকে।
হস্তশিল্প ব্যবসা:
বাংলাদেশে হস্তশিল্পের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ। হস্তশিল্প ভালোবাসেনা এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা রয়েছে। হস্তশিল্প বলতে আমরা বুঝি হাতে তৈরি যে কোন জিনিসকে।একসময় নকশিকাঁথা প্রচলন বেশি ছিলো।এখনও গ্রাম অঞ্চলে নকশিকাঁথা দেখা যায়, অনেক শিল্প পতিরা এই নকশিকাঁথা পছন্দ করে থাকে।
হস্তশিল্প পণ্য হতে পারে,নকশিকাঁথা, মাটির পাত্র, বেতের সামগ্রী ইত্যাদি। পুঁজি: কম পুঁজিতে কাজ শুরু করা যায়। শুরু করার জন্য ভালো হস্তশিল্প তৈরী করে এমন লোক খুঁজে বাহির করতে হবে।ফেসবুক পেইজ লাগবে, মার্কেটিং এর নলেজ লাগবে। ১০-২০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করা যাবে। হাতে বানানো পণ্যের চাহিদা সবসময় থাকে। মানুষ তার প্রিয়জনকে হাতের তৈরি জিনিস উপহার দিতে পছন্দ করে।
ই-কমার্স ব্যবসা:
বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটে ব্যাবহার করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল।ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে অনলাইন শপিংয়ের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। আপনি কোন না কোন সময় অনলাইন থেকে কোন কিছু ক্রয় করেছেন। বর্তমান সময়ে ই- কমার্স ব্যবসার জন্য তেমন পুঁজি না থাকলে শুরু করা যায়।প্রথম অবস্থায় সামাজিক মাধ্যমে একটি পেজ খুলে শুরু করা যেতে পারে। ব্যাবসা ধরন হবে পুরোটাই অনলাইনে।
এইটা করতে আপনাকে পণ্য সিলেকশন, পণ্য প্যাকেজিং এবং পণ্য ডেলিভারিতে নজর দিতে হবে। এগুলো যদি আপনি সঠিকভাবে করতে পারেন তাহলে সহজেই ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
আপনার জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে পটেনশিয়াল ক্লায়েন্ট সংগ্রহ করা। ক্লায়েন্টকে যদি ভালো মতো সার্ভিস দেওয়া যায় তাহলে এই ক্লায়েন্ট আপনার লাইফটাইমের হয়ে যাবে।
পণ্য হতে পারে: পোশাক, জুয়েলারি, গৃহস্থালির জিনিসপত্র, শুটকি, মধু ইত্যাদি।আপনার থেকে নিশ্চিত করতে হবে হোম ডেলিভারি পরিষেবা কর্নফার্ম করতে হবে।
পুঁজি কম হলেও শুরু করা যায়,তবে পরিশ্রম আপনার থেকে করতে হবে। কম পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করা যায়।নতুন অবস্থায় স্টার্টআপ খরচ কম। কর্মচারি একজন হলেই যথেষ্ট।ঘরে বসেই পরিচালনা সম্ভব। এটা শুরু করতে অফিস বা গুদাম প্রয়োজন নাই।
কোচিং সেন্টার:
শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ সবসময়ই লাভজনক। বাংলাদেশ শিক্ষা এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। প্রত্যেক বাবা-মা তাদের সন্তানদেরকে চাই উচ্চশিক্ষায় অগ্রগতি করতে।আপনি যদি ছাত্রদের চাহিদা মোতাবেক টিউশন দিতে পারেন আপনার ব্যবসা হবে জমজমাট।
বিভিন্ন সাবজেক্ট নিয়ে টিউশন দেওয়া যায়,ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞানের কোচিং দেওয়া যায়।ইনভেস্টমেন্ট ছোট খাটো হলে হবে। একটি ছোট ঘর প্রয়োজন।৫-১০ হাজার টাকা খরচ করলে শুরু করা যায়।
মোবাইল রিপেয়ারিং সার্ভিস:
প্রতিদিন মোবাইল ফোনের ব্যবহার বাড়ছে। মোবাইল সার্ভিস এর বর্তমানে অনলাইনে অনেক কোর্স পাওয়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে।এই কোর্স গুলো করে আপনি ও মোবাইল সার্ভিস ব্যবসা শুরু করতে পারেন এটার চাহিদা সবসময় থাকবে। যে কাজ করেন না কেন দক্ষজনবল ছাড়া আয় করা সম্ভব না।
মানুষের চাহিদা:স্ক্রিন রিপ্লেসমেন্ট, ব্যাটারি পরিবর্তন, সফটওয়্যার আপডেট ইত্যাদি।পুঁজি: ২০,০০০-৫০,০০০ টাকায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কেনা সম্ভব। এই ব্যবসায় একটু ইনভেস্ট প্রয়োজন।সল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করে বড় পরিসরে বাড়ানো সম্ভব।
টেইলরিং ব্যবসা:
নিজস্ব ডিজাইন করা পোশাকের চাহিদা সবসময়ই বেশি।ডিজাইন করা পোশাক মেয়েরা বেশি পছন্দ করে। ডিজাইন করা পোশাক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমরা দেখতে পাই মেয়েরা পরিধান করে।পণ্য: শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি ইত্যাদি।
এ-ই ব্যবসার জন্য পুঁজি থাকাটা জুরুরি। মিনিমাম ৩০,০০০-৫০,০০০ টাকায় বুটিক শপ শুরু করা যায়।কাজের চাহিদা থাকার সত্বেও এটা শুরু করতে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করতে হবে আপনাকে।ভালো টেইলর লাগবে আপনার এবং বিক্রির জন্য ভালো ক্রেতা খুঁজতে হবে তার জন্য মার্কেটিং করতে হবে। বিক্রি করতে পারেন অনলাইন বা অফলাইনে সব জায়গায় করা সম্ভব। ফেসবুক হতে পারে সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস।
সর্বশেষ,
ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করার জন্য সঠিক পরিকল্পনা এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। এই ব্যবসাগুলো থেকে নিজের দক্ষতা ও চাহিদা অনুযায়ী একটি বেছে নিন। বাজার বিশ্লেষণ এবং ক্রেতাদের প্রয়োজন বুঝে ব্যবসা পরিচালনা করুন। এই খান থেকে যে কোন একটা ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে পারেন। সবসময় একটা জিনিস মনে রাখবেন ব্যবসার জন্য লাগে সঠিক পরিকল্পনা এবং শ্রম তাহলে যে কোন ব্যবসা সফল হওয়া যায়।
যদি কোনো প্রশ্ন থাকে, কমেন্টে জানান।আপনার মতামত বা অভিজ্ঞতা জানাতে ভুলবেন না! আমাদের টেলিগ্রাম জয়েন করতে ভুলবেন না।