সরকারি আয় হলো রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের উৎস। এই আয়ের মাধ্যমে সরকার দেশের প্রশাসনিক কার্যক্রম, অবকাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা এবং জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে থাকে। সাধারণ জনগণের করের ওপর চলে সরকারি আমলাদের বেতন।
আমজনতার কর না দিলে রাষ্ট্রিয় অবকাঠামো ভালো মতো উন্নয়ন সম্ভব না। আমরা যে পোশাক পরিধান করি সেটাতে ও আমাদের টেক্স দিতে হয়, আমরা যে ইন্টারনেট ব্যাবহার করি সেটাতে কর দিতে হয়, আমরা এতো কর দেওয়া পরেও সরকার আমাদের চাহিদা পূর্ণ করতে পারে না।
আমাদের সবার মনে একটা প্রশ্ন জাগে বাংলাদেশ সরকারের আয়ের প্রধান উৎস কয়টি এবং কি? সরকার কি করে টাকা আয় করে আমাদের থেকে।এই ব্লগ পোস্টে সরকারের আয়ের উৎস কি কি এগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
বাংলাদেশ সরকারের আয়ের প্রধান উৎস কি?
বাংলাদেশ সরকারের আয়ের প্রধান উৎস তিনটি মেজর ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়:
- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) এর কর।
- অ-কর রাজস্ব।
- ঋণ ও বিদেশি সাহায্য।
NBR: এনবিআর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজস্ব সংগ্রহকারী সংস্থা।এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের অধীনে। এটিকে প্রধানত ৩ ভাগে ভাগ করা যায়:
- আয়কর (Income Tax)
- ভ্যাট (VAT)
- শুল্ক (Customs Duty)
অ-কর রাজস্ব: এটি মূলত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান থেকে কর সংগ্রহ করে থাকে। যত রাষ্ট্রেয়ত্ত ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠান আছে সবার থেকে একটা রাজস্ব নিয়ে থাকে সরকার। যেমন: বাংলাদেশ ব্যাংক, বিদ্যুৎ বিভাগ, এবং টেলিকম খাত। আমরা বিদুৎ ব্যাবহার করি এটা সরকারের অ-কর রাজস্ব বোর্ডে জমা হবে। এটাও NBR অধীনে থাকে।
আমরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে থাকি তার জন্য প্রয়োজন লাইসেন্স বা অন্যান্য ফ্রী এসব সরকারে অধীনে জমা হয়। ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে হয় প্রতিবছর, কর দিতে হয় ব্যাক্তিকে এগুলো সব সেবার বিনিময়ে ফি, লাইসেন্স ফি, এবং অন্যান্য চার্জ নিয়ে থাকে।
ঋণ ও বিদেশি সাহায্য: বাংলাদেশের উন্নয়ন কাঠামো তৈরীতে বিদেশি সাহায্য এবং ঋণ এর বড় হাত। সবচেয়ে বেশি ঋণের জোগান আসে চীন থেকে। চীন আমাদের উন্নয়ন এর বন্ধু। তবে সাহায্যে জন্য বাংলাদেশের পাশে থাকে জাপান। চীনের কাছে আমরা যদি সাহায্য এবং ঋণ না পেলে পদ্মা সেতু করা যেত না এই সেতু করার জন্য চীন বাংলাদেশ কে প্রচুর নগদ অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে। তবে এই টাকা অনেক পাচার ও হ’য়েছে বটে।
বিদেশের সাহায্য না থাকলে স্বল্প উন্নয়নের দেশের অর্থনীতি অবস্থা খুবই নাজুক হতো। বাংলাদেশ কে সবসময় সাহায্য করে থাকে আমেরিকা। তবে এই সাহায্যতে আমেরিকার স্বার্থ রাজনৈতিক কৌশল আছে বিদায় সাহায্য করে সবসময়। শুধু আমেরিকার না বিভিন্ন মেডিকেল কিট, সামরিক সহয়তা, গোয়েন্দা তথ্য মতোও সাহায্য করে থাকে।
এমন না যে বাংলাদেশ সবসময় সাহায্য নিয়ে থাকে বিভিন্ন দেশ থেকে। Sri Lanka যখন দেউলিয়া হওয়ার পথে তখন বাংলাদেশ $২০০ মিলিয়ন ডলারের অর্থ সহয়তা প্রধান করে।এই ভাবে এক দেশ আরেক দেশকে সাহায্য মাধ্যমে সেই দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখে।
মাসিক আয় বলতে কি বুঝায়: কিভাবে পরিচালনা করবেন
রেমিট্যান্স মানে কি? প্রবাসী আয়ের অর্থনীতি
অনেক সময় বাংলদেশ বৈদেশিক ঋণ ও নিয়ে থাকে অর্থনীতিকে শক্তিশালি করতে। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ ঋণ নিয়ে থাকে বাংলাদেশ।এই ঋণ আস্তে শোধ করতে হয়, মূলত একটা দেশ তাদের রিজার্ভ ঠিক রাখার জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে থাকে।
রাজস্ব নীতির উদ্দেশ্য সমূহ কি কি?
রাজস্ব নীতি হলো সরকারের আয় ও ব্যয়ের পরিচালন নীতি। সরকার চাইলে যে কোন পণ্যর ওপর তাদের রাজস্ব বসাতে পারে। এটাতে জনগনের কাছে দায়বদ্ধতা নেই। মনে করুন সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করেছে সিগারেটের ওপর, এটা এক প্রকার ভালো দিক।
সরকার যে কোন পণ্যের ওপর শুল্ক বা কর নিতে পারে। তবে সব জিনিস এর ওপর এমন করা কিন্তু ভালো না, আমরা জানি রমজানের সময় খেজুরের চাহিদা প্রচুর। এই খেজুর আমদানি দামের চাইতে ৫০ গুণ বেশি দিয়ে জনগণকে ক্রয় করতে হয়। এগুলো হলো সিন্ডিকেট এই সিন্ডিকেটের জন্য দেশের সাধারণ মানুষ কষ্ট পাই।
সরকার এই টাকা নিয়ে করে কি? অনেকের মনে এমন প্রশ্ন আসতে পারে। নিচে কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখ করা হলো সরকার এই টাকা নিয়ে করে কি।
- সরকারি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য: সরকারের প্রশাসনিক ব্যয়, উন্নয়ন প্রকল্প এবং সামাজিক সেবা খাতে বিনিয়োগ এর জন্য এই কর নিয়ে থাকে। সব সরকারি আমলার বেতন, ভাতা, চিকিৎসা খরচ ইত্যাদি ভরনপোষণ এর জন্য এসব কর নিয়ে থাকে।
- আয় বণ্টনে সমতা আনা: কর ব্যবস্থা ও সরকারি ব্যয়ের মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আয়ের বৈষম্য কমানো। গরীবে কর দিবে ধনীরা কর দিবে না এমন কিছু নেই। সবার জন্য আইন সমান সবাই কর দিবে।
- অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা:মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করা।
- উন্নয়ন কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করা: অবকাঠামো, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি।
- কর ফাঁকি রোধ ও আদায় পদ্ধতি সহজতর করা:আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কর সংগ্রহ পদ্ধতি স্বচ্ছ ও দ্রুততর করা।
মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতি কি?
মুদ্রানীতি (Monetary Policy): এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত একটি নীতি, যার মাধ্যমে অর্থ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক এর নীতি অনুসারে দেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা।ডলার এর দাম কত হবে, সোনার দাম কত হবে বৈদেশিক মুদ্রার দাম কত হবে সবই বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারন করে।বাংলাদেশ ব্যাংক চেষ্টা করে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করার জন্য।
রাজস্ব নীতি (Fiscal Policy): এটি সরকারের রাজস্ব (আয়) সংগ্রহ এবং ব্যয় ব্যবস্থাপনার নীতি অনুসরণ করে। রাজস্ব নীতির প্রধান লক্ষ্য হলো সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা। সবাই ঠিক মতো কর দিচ্ছে কিনা ইত্যাদি। বাংলাদেশের কর ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য সমূহ পূরণ হচ্ছে কিনা এটাও দেখতে হয়।
বাংলাদেশের কর ব্যবস্থার লক্ষ্য হলো।
- রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি।
- কর কাঠামো সহজীকরণ।
- কর ফাঁকি রোধ।
- ডিজিটাল কর ব্যবস্থা।
- আয় বণ্টনে সাম্যতা আনা।
সর্বশেষ
সরকারি আয়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং কর নীতির উন্নয়ন একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। বাংলাদেশকে আত্মনির্ভরশীল করতে হলে জনগণের মধ্যে কর পরিশোধের মানসিকতা গড়ে তোলা এবং কর ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি। জনগন যদি ভালো মতো কর দিতে পারে তাহলে সরকার এবং দেশের জন্য ভালো। তবে অনেক দুনর্তি করে থাকে এটা দেশের এবং সরকারের জন্য ভালো নই।
আপনার মতামত বা অভিজ্ঞতা জানাতে ভুলবেন না! আমাদের টেলিগ্রাম জয়েন করতে ভুলবেন না।